হালিমের খুটিনাটি ও রেসিপি।
হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটি সারা দিনের পুষ্টি ঘাটতি কমাতে দারুণ কার্যকর। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পারস্য সম্রাটের শাহি দস্তরখান
থেকে ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট হুমায়ুনের হাত ধরে এদেশে হালিম খাবারটির প্রচলন শুরু হয়।
কিন্তু হালিমের ভারত জয় হয় তার অনেক পরে। হায়দরাবাদে নিজামের তুর্কি সেনাদের দস্তরখান থেকে এর জনপ্রিয়তা শুরু।
ষষ্ঠ শতকে পারস্যদেশে তৎকালীন সম্রাট খুসরোর আমলে ডাল, গম, মাংস আর নানা ধরনের মশলায় তৈরি হতে শুরু করে হালিম।
তখন সুস্বাদু এই খাবারটির নাম অবশ্য হালিম ছিল না। তখন সবাই একে বলতো ‘হারিশ’।
পর্যটকদের হাত ঘুরে এর পরের শতকেই তা পৌঁছায় তুরস্কের খলিফার প্রাসাদে। সেখান থেকে আরব দুনিয়া রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে হারিশেরপরিচিতি। নিজামের পাকশালে সেই হারিশ নাম পালটে হয় হালিম।
ভারতের পরে বাংলাদেশেও হালিমের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। বাংলাদেশে দুই ধরনের হালিম বেশ জনপ্রিয়। একটি হলো হায়দরাবাদি আর অন্যটি আওয়াধি।
হায়দরাবাদি হালিম মূলত বেশ ঘন, মাংস, ডাল ও গমের পেস্ট। আওয়াধি হালিম অবশ্য হায়দরাবাদি হালিমের তুলনায় বেশ তরল প্রকৃতির।
বাংলাদেশে ঘন হায়দরাবাদি হালিমই বেশি জনপ্রিয়।
হালিম তৈরিতে প্রয়োজন হয় পাঁচ রকমের ডাল, চাল, মাংস, গম ও বিভিন্ন ধরনের মশলা। বর্তমানে এই খাবারটি শুধু মুসলিমদের নয়,
সব ধর্মের মানুষেরই প্রিয় খাবারের তালিকায় স্থান পেয়েছে এর অতুলনীয় স্বাদের গুণে।
জেনে নিন রেসিপি
উপকরণঃ
১ কেজি মাংস গরু/ খাসী / মুরগী (হাড় সহ)
২ কাপ গম আধা ভাঙা
১/৪ কাপ চানা/বুটের ডাল আধা ভাঙা
১/৪ কাপ মাষকলাই/ উরড ডাল আধা ভাঙা
১/৪ কাপ ভাজা মুগ ডাল আধা ভাঙা
১/৪ কাপ মসূর ডাল আধা ভাঙা
১/৪ কাপ খেসারি ডাল আধা ভাঙা
১/৪ কাপ বাসমতী চাল আধা ভাঙা
সব শস্য আলাদা আলাদা ভাবে ব্লেন্ডারে আধাভাঙ্গা করে নিতে হবে
ঝোলের জন্য
১/২ কাপ পেঁয়াজ কুচি
১ কাপ টকদই
১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
১/২ টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়া বা স্বাদমতো
৬-৮ কাপ পানি
১/৪ কাপ তেল বা ঘি
লবন পরিমাণমতো
৩ চা-চামচ হালিম মশলা
পরিবেশন এর জন্য
১ কাপ পেঁয়াজ বেরেস্তা
১ মুঠো ধনে পাতা কুচি
২ টেবিল চামচ আদা চিকন করে কুচি করা
১ কাপ শশা কুচি
২/৩ টি কাঁচা মরিচ কুচি
২-৩ টি লেবু'র ফালি
২ টেবিল চামচ ঘি
১ চা চামচ জিরা গুঁড়া ভাজা
সবরকম শস্য অর্থাৎ চাল-ডাল-গম একসাথে করে ৮ কাপ পানি দিয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
হালিম মশলা তৈরী করতে সমপরিমানে (১ টেবিল চামচের মতো ) জিরা, ধনে, শুকনা মরিচ, গোলমরিচ, দারুচিনি,
এলাচ, লবঙ্গ, জয়ত্রী , সরিষা, মেথি, মৌরী নিয়ে একসাথে মিহি গুঁড়া তৈরী করে নিতে হবে। এই মশলা থেকে ৩ টেবিলচামচ পরিমান মশলা হালিমে অ্যাড করবেন।
একটা পাত্রে মাংসের সাথে টকদই, হালিম মশলা, আদা-রসুন বাটা ও লবন দিয়ে মাখিয়ে ১ ঘন্টার জন্য মেরিনেট করে রাখতে হবে।
যে মাংসই নেন না কেন চেষ্টা করবেন হাড্ডিসহ মাংস নিতে।
এবার একটি বড় হাড়িতে তেল/ঘি গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। তারপর এতে হলুদ ও মরিচ গুঁড়া দিয়ে
নেড়ে মেরিনেট করা মাংস ঢেলে দিন। এভাবে তেলের মধ্যে হলুদ-মরিচ গুঁড়া দিলে সুন্দর কালার আসে। তবে মরিচ গুঁড়া দেয়ার সময় পরিমাণমতো
দিবেন কারণ হালিম মশলাতেও মরিচ দেয়া আছে।
তারপর মাংস কষিয়ে কষিয়ে রান্না করে নিন। সেদ্ধ হতে পানির প্রয়োজন হলে আন্দাজমতো পানি দিয়ে মাংসটাকে নরম করে রান্না
করে ফেলুন। মাংস রান্না হয়ে তেল উপরে উঠে গেলে ভিজিয়ে রাখা সব শস্য পানি সহ এতে ঢেলে মিশিয়ে দিন।
তারপর আঁচ কমিয়ে ঢেকে চাল-ডাল-গম সব ভালোমতো সেদ্ধ ও গলে যাওয়া পর্যন্ত রান্না করে নিন। তবে একটু পর অবশ্যই
ঢাকনা খুলে ভালোকরে নেড়েচেড়ে দিবেন , নাহলে তলায় ধরে যাবে। দরকার পড়লে এক্সট্রা পানিও অ্যাড করতে পারেন। ঘন হলে নামিয়ে নিন।
হয়ে গেলে শশা কুচি, ধনেপাতা কুচি , আদাকুচি।, কাঁচামরিচ কুচি , পেঁয়াজ বেরেস্তা, ভাজা জিরা গুঁড়া , ঘি ও লেবু ছড়িয়ে
পরিবেশন করুন। আর উপভোগ করুন দারুন স্বাদের বাড়িতে তৈরি শাহী হালিম।

.jpg)
0 Comments